"বিষাক্ত কারখানার দাপটে শ্রীপুরে শ্বাসকষ্ট, মৃত গরু-ছাগল ও নষ্ট ফসলের বিপর্যয়"

গাজীপুরের শ্রীপুরের কেওয়া পূর্ব খণ্ড গ্রামের মানুষদের মধ্যে নানা ধরনের সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে, যার কারণ একটি অবৈধ কারখানা। এই কারখানার বিষাক্ত ধোঁয়া, পানি এবং বর্জ্য পরিবেশে ছড়িয়ে পড়ছে, যার ফলে এলাকার বাসিন্দারা শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন রোগে ভুগছেন। গরু ও ছাগল মারা যাচ্ছে, এবং জমির ফসলও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। গ্রামের গাছপালার স্বাস্থ্যও খারাপ হয়ে পড়েছে, ফল উৎপাদন কমে গেছে।

এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, ‘ডেলি ইন্ডাস্ট্রিয়াল লিমিটেড’ নামের কারখানাটি মূলত সিসা গলানোর জন্য অবৈধভাবে কাজ করছে। স্থানীয়রা এটিকে ‘সিসা কারখানা’ হিসেবে চেনে। এই কারখানার শ্রমিকদের মতে, এখানে পুরোনো ব্যাটারির সিসা গলিয়ে নতুন ব্যাটারি তৈরি করা হয়। কারখানার বিষাক্ত ধোঁয়া, পানি ও বর্জ্য পরিবেশে ছড়িয়ে পড়ছে, যার ফলে শ্বাসকষ্ট, গাছপালার ক্ষতি এবং মৃত পশুদের ঘটনা ঘটছে।

এলাকার বাসিন্দারা জানান, ২০১৫ সালে একটি চীনা কোম্পানি এই কারখানাটি প্রতিষ্ঠা করে, তবে ২০২০ সালের দিকে পরিবেশে তার ক্ষতিকর প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। প্রথমদিকে গাছপালা মরে যেতে শুরু করে এবং জমির ঘাস খেয়ে গরু-ছাগল মারা যেতে থাকে। ধীরে ধীরে শ্বাসকষ্টসহ নানা রোগের প্রকোপ বাড়ে। এলাকাবাসীরা কয়েকবার প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করলেও, পুলিশ কারখানাটি সিলগালা করলেও পরবর্তীতে তা আবার চালু হয়ে যায়।

গাজীপুর জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আরেফিন বাদল জানান, দুই সপ্তাহ আগে স্থানীয় একটি অভিযোগের পর তাঁরা এই বিষয়ে জানাশোনা করেছেন এবং আগামী সপ্তাহে এই কারখানায় অভিযান পরিচালনা করার পরিকল্পনা করেছেন। তবে, কেন এতদিন কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি, সেই প্রশ্নে তিনি জানান যে, তিনি আগে জানতেন না।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, কারখানার বর্জ্য সরাসরি ফসলের জমিতে চলে আসে, যার ফলে ফসলের উৎপাদন কমে যাচ্ছে এবং গাছপালার ফল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ধান ও অন্যান্য ফসলের ক্ষতি হচ্ছে এবং গাছের ফলও আগের মতো হয়নি।

কেওয়া পূর্ব খণ্ড গ্রামের শিশু-কিশোররা জানায়, তারা স্কুলে থাকাকালীনও কারখানার ধোঁয়া তাদের ক্লাসরুমে এসে পৌঁছায়, ফলে তাদের শ্বাসকষ্ট এবং চোখে জ্বালা-পোড়া হয়। শিক্ষকরাও জানাচ্ছেন, এই কারখানার কারণে এলাকার জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে রয়েছে।

এছাড়া, কারখানার শ্রমিকদের মধ্যে শ্বাসকষ্ট এবং চর্মরোগের মতো সমস্যা দেখা দিচ্ছে। এখানকার শ্রমিকরা উচ্চ বেতন পেলেও এক বছরের বেশি কাজ করতে চাই না, কারণ ক্ষতিকর পরিবেশের কারণে তাদের স্বাস্থ্য আক্রান্ত হচ্ছে।

এদিকে, শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা প্রণয় ভূষণ দাস জানালেন, সিসার বিষাক্ত বর্জ্য মানুষের শ্বাসকষ্ট, রক্তকণিকার সমস্যা এবং মানসিক রোগ সৃষ্টি করছে।

এখনও পর্যন্ত অবৈধ এই কারখানার কার্যক্রম বন্ধ হয়নি, তবে এলাকার বাসিন্দারা আশা করছেন, প্রশাসন শীঘ্রই এই বিষয়টির সমাধান করবে, যাতে তাঁদের স্বাস্থ্য এবং পরিবেশের বিপর্যয় ঠেকানো যায়।

সর্বশেষ সংবাদ