অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, "আমরা মাত্র ১০০ দিন আগে একটি ঐতিহাসিক রাজনৈতিক পরিবর্তনের সাক্ষী হয়েছিলাম। ভবিষ্যতের বাংলাদেশ হবে ন্যায়বিচার, মানবাধিকার ও বাক্স্বাধীনতার দেশ।"
আজ শনিবার সকালে ঢাকার একটি হোটেলে তিন দিনের আন্তর্জাতিক সম্মেলনের উদ্বোধনকালে তিনি এ কথা জানান। বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস) ‘বে অব বেঙ্গল কনভারসেশন ২০২৪’ (বঙ্গোপসাগর সংলাপ)-এর আয়োজন করেছে।
ড. ইউনূস বলেন, "অর্থনৈতিক বৈষম্য, সামাজিক অবিচার এবং জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জগুলো বাংলাদেশের জন্য বড় বাধা। তবে, বাংলাদেশ বারবার প্রমাণ করেছে যে, প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবিলা করা আমাদের পক্ষে সম্ভব।"
জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানে তরুণদের ভূমিকার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, "আমরা ১০০ দিন আগে একটি ঐতিহাসিক রাজনৈতিক পরিবর্তনের সাক্ষী হয়েছিলাম, যেখানে ছাত্র-জনতার বিপ্লব ফ্যাসিস্ট সরকারকে উৎখাত করেছে। এক হাজার ৫০০ শিক্ষার্থী, শ্রমিক ও সাধারণ মানুষের প্রাণ গেছে, আহত হয়েছেন প্রায় ২০ হাজার প্রতিবাদকারী। এই সম্মেলনের মাধ্যমে আসুন আমরা তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাই, যারা তাদের জীবন উৎসর্গ করেছেন, যারা শারীরিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, এবং যারা এখনও জীবনযুদ্ধে লিপ্ত।"
বিদেশি অতিথিদের উদ্দেশে ড. ইউনূস বলেন, "আপনারা যখন ঢাকার রাস্তায় হাঁটবেন, তখন রাস্তাগুলোর দেয়ালে তরুণদের আবেগ ও আকাঙ্ক্ষার প্রকাশ হিসেবে আঁকা রঙিন চিত্রকর্মগুলো দেখতে পাবেন। এসব চিত্রকর্ম তরুণদের সৃজনশীলতার শক্তি এবং তাদের জাতিগত চেতনাকে প্রকাশ করে।"
সভ্যতার বর্তমান অবস্থার সমালোচনা করে তিনি বলেন, "এই সভ্যতা আমাদের ব্যর্থ করেছে। শুধু পরিবেশের দিক থেকেই নয়, মুনাফার পেছনে মানুষের অন্ধ দৌড়ানোর কারণেও এটি ঘটেছে।"
ড. ইউনূস আরও বলেন, "এখন সময় এসেছে একটি নতুন সভ্যতা গড়ার, যেখানে সম্পদকে কুক্ষিগত করা হবে না, বরং সেগুলো সবার মাঝে সমানভাবে বিতরণ হবে।"
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, "দেশের লক্ষ লক্ষ মানুষ আজ পরিবর্তনের দাবি জানাচ্ছে। তারা মানবাধিকার, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, ন্যায়বিচার এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক ভবিষ্যৎ গড়ার জন্য ঐক্যবদ্ধ।" তাই এবারের সম্মেলনের প্রতিপাদ্য বিষয় হচ্ছে ‘একটি ভঙ্গুর বিশ্ব’। তিনি বিশ্বাস করেন, "প্রতিটি সমস্যার সমাধান আছে, যদি আমরা ধৈর্য্য ও সাহসের সঙ্গে এগিয়ে যাই।"
সম্মেলনে আরও বক্তব্য দেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন, মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ, বলিভিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট ফার্নান্দো রামিরেজ, এবং সিজিএসের চেয়ারপারসন মনিরা খান। সিজিএসের নির্বাহী পরিচালক জিল্লুর রহমান অধিবেশনটি পরিচালনা করেন।