জাতীয় দলের ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান এবং তাঁর মা শিরিন আকতারকে শেয়ারবাজারে কারসাজির মাধ্যমে মুনাফা অর্জনের জন্য ৫০ লাখ টাকা জরিমানা করেছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। গত ২৪ সেপ্টেম্বর বিএসইসি এই জরিমানা আরোপ করে।
সাকিব এবং তাঁর মায়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তারা একটি বিমা কোম্পানির শেয়ার নিয়ে কারসাজি করেছেন, যার নাম প্যারামাউন্ট ইনস্যুরেন্স। সাকিব এবং তাঁর মায়ের নামে খোলা একটি যৌথ বেনিফিশিয়ারি ওনার্স (বিও) হিসাব ব্যবহার করে তারা এই কারসাজি সম্পন্ন করেন। এই হিসাবটি একটি বেসরকারি ব্যাংকের সহযোগী ব্রোকারেজ হাউসে খোলা হয়েছিল।
ডিএসই (ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ) এর তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে বিএসইসি সাকিবসহ আরো কয়েকজনকে জরিমানা করে। ২০২৩ সালের আগস্ট থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে প্যারামাউন্ট ইনস্যুরেন্সের শেয়ারের দাম প্রায় ৮৫ শতাংশ বৃদ্ধি পায়, যা অস্বাভাবিক মুভমেন্ট বলে চিহ্নিত করা হয়। তদন্তে দেখা যায়, এই সময়ে শেয়ারটি নিজেদের মধ্যে হাতবদল করা হয়েছিল, যার মাধ্যমে দাম বৃদ্ধি করা হয়।
এই ঘটনায় সাকিব আল হাসান এবং তাঁর মা শিরিন আকতারসহ মোট সাতজন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে ১ কোটি ৬৩ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। সাকিবকে ৫০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়, যা দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। অন্যদিকে, প্যারামাউন্ট শেয়ারের কারসাজির সঙ্গে জড়িত আবুল খায়ের হিরুকে ২৫ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।
ডিএসই ও বিএসইসির প্রতিবেদন অনুযায়ী, সাকিব আল হাসান এবং তাঁর মায়ের বিও হিসাবে মাত্র তিন দিনে প্যারামাউন্ট ইনস্যুরেন্সের ১০ লাখ ৬০ হাজার শেয়ার কেনা হয়, যার গড় ক্রয়মূল্য ছিল ৬৫ টাকা ২৪ পয়সা। এ জন্য প্রায় ৭ কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হয়। এরপর ওই শেয়ারের বেশিরভাগই মাত্র পাঁচ দিনের মধ্যে বিক্রি করে দেওয়া হয়, যার ফলে প্রায় ৯০ লাখ টাকার মুনাফা হয়।
বিএসইসি শুনানিতে সাকিবের পক্ষ থেকে যে ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছিল, তাতে বলা হয়, প্যারামাউন্ট ইনস্যুরেন্স একটি লাভজনক কোম্পানি এবং এর মৌলিক ভিত্তি দেখে শেয়ার কেনা হয়েছিল। তবে বিএসইসি এই ব্যাখ্যা গ্রহণ করেনি, কারণ তারা মনে করে, শেয়ারবাজারে কারসাজির ফলে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, যা পুঁজিবাজারের সুষ্ঠু বিকাশের পরিপন্থী।
এদিকে, সাকিব আল হাসান এবং তাঁর মা শিরিন আকতারকে ৫০ লাখ টাকা জরিমানা করা হলেও এই শেয়ারবাজারের কারসাজির ঘটনার সমাপ্তি নয়, বরং এটি পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার উপর আরও কঠোর মনিটরিংয়ের একটি বড় প্রমাণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।