বাংলাদেশের আফগানিস্তানের বিপক্ষে সিরিজ হার: কোথায় হলো ভুল?

বাংলাদেশের আফগানিস্তানের বিপক্ষে সিরিজ হার: কোথায় হলো ভুল?

বাংলাদেশের আফগানিস্তানের বিপক্ষে সিরিজ শুরুর আগে দুটি বিষয় ছিল, যা তাদের আত্মবিশ্বাস জোগাচ্ছিল—একটি ছিল ওয়ানডে সংস্করণে আফগানিস্তানের বিপক্ষে অতীত রেকর্ড এবং অপরটি ছিল শারজার উইকেট। যদিও শারজার উইকেট ৩০০ রানের জন্য আদর্শ নয়, ২৫০ রানের আশপাশে দারুণ লড়াই করার সুযোগ থাকতো, যা বাংলাদেশ চেয়েছিল। তবে, সিরিজ শেষ হওয়ার পর বাংলাদেশ ২-১ ব্যবধানে হারলো, আর প্রশ্ন ওঠে—কোথায় যেন ভুল হয়ে গেল?

### এক হঠাৎ ঝড়

সিরিজের প্রথম ম্যাচে আফগানিস্তান ২৩৫ রানে অলআউট হয়। বাংলাদেশের বোলারদের পারফরম্যান্স ভালো ছিল, তাসকিন আহমেদ এবং মোস্তাফিজুর রহমান দুজনেই নেন ৪ উইকেট। রিশাদ হোসেন কিছুটা খরুচে ছিলেন, তবে এই ভুলকে তেমন গুরুত্ব দেওয়া যায় না। কিন্তু রান তাড়া করতে গিয়ে বাংলাদেশ একপর্যায়ে ২ উইকেটে ১২০ রানে পৌঁছে গিয়েছিল। তখন জয়টাই মনে হচ্ছিল সম্ভব। তবে এরপর বাংলাদেশ হুট করেই ব্যাটিং ধসের শিকার হয়ে ২৩ রানে শেষ ৮ উইকেট হারায় এবং ৯২ রানে পরাজিত হয়। গজনফরের ৬ উইকেট নেয়ার কৃতিত্ব থাকলেও, বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানদের অদ্ভুত শট নির্বাচনে ম্যাচটি হাতছাড়া হয়ে যায়।

### স্থবির মিডল ওভার

তৃতীয় ম্যাচে, বাংলাদেশের ইনিংসের মাঝামাঝি সময়ে (১৫ ওভারের পর) রান ছিল ৭৩/৪। পরবর্তী ২৫ ওভারে ৯৩ রান যোগ করেই বাংলাদেশের সংগ্রহ ১৬৬ রান পর্যন্ত পৌঁছায়। শারজার উইকেটে ২৫০ রানও ভালো সংগ্রহ হতে পারতো, কিন্তু বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ে তেমন কোনো ঝুঁকি নেওয়া হয়নি। দ্বিতীয় ম্যাচেও ১৫২ রান করতে গিয়ে বাংলাদেশ ১৮৪ রানে শেষ ৬ উইকেট হারিয়েছিল। প্রথম ম্যাচের ব্যাটিং ধস তো সবাই জানে, সেটি ছিল সবচেয়ে বড় শিক্ষা।

### হৃদয় কোথায়?

তাওহিদ হৃদয়ের জন্য এই সিরিজ ছিল কঠিন। কিছুই করতে পারেননি—১১, ১১, ৭ রান করেছিলেন। তাঁর ব্যর্থতায় মিডল অর্ডারে বাংলাদেশের আরও সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। মুশফিকুর রহিম এবং নাজমুল হোসেনের মতো গুরুত্বপূর্ণ ব্যাটসম্যানেরা ছিটকে যাওয়ায় হৃদয়ের দায়িত্ব বেড়ে গিয়েছিল, কিন্তু তিনি কিছুই করতে পারেননি।

### ওপেনাররা, জ্বলে উঠবেন কবে?

এটি টি-টোয়েন্টি নয়, ওয়ানডে ক্রিকেট। ওপেনারদের দায়িত্ব বড় ইনিংস খেলার, কিন্তু সৌম্য সরকার কোনো ম্যাচে বড় রান পাননি। প্রথম দুই ম্যাচে আউট হন ৩০-এর ঘরে, পরের ম্যাচে ২০ রান। তাঁর কাছে যে বড় ইনিংস প্রত্যাশা ছিল, সেটি পাওয়া যায়নি। আর তানজিদ হাসান, যার ক্যারিয়ার গড় মাত্র ১৮, এই সিরিজেও কোনো ম্যাচে ২৫ রান করতে পারেননি। এরপরও তাঁকে নিয়ে ভাবতে হবে, নাকি অন্য কোনো বিকল্প খুঁজতে হবে?

### ফিল্ডিংয়ের অবহেলা

গুরবাজের মতো ব্যাটসম্যান ফিল্ডিংয়ের সুযোগে বেঁচে গিয়েছিলেন। ক্যাচ, স্টাম্পিং, এবং একাধিক রান আউটের হাত থেকে বেঁচে গুরবাজ শেষ পর্যন্ত সেঞ্চুরি করেন। সিরিজে এমন আরও ফিল্ডিংয়ের সুযোগ হাতছাড়া হয়েছে, যা বাংলাদেশকে আরও অনেক বড় ধাক্কা দিয়েছে। যদিও বোলাররা খারাপ করেননি, আফগানিস্তান কখনো বড় সংগ্রহ করতে পারেনি বা দ্রুত লক্ষ্য ছোঁয়নি। কিন্তু ফিল্ডিংয়ের দুর্বলতা দলকে ভুগিয়েছে।

### ইতিবাচক দিক

অবশ্য সিরিজে কিছু ইতিবাচক দিকও ছিল। নাহিদ রানা, বাংলাদেশের পেসার, অভিষেকে ৪০ রানে ২ উইকেট নিয়েছেন এবং ১৫১ কিলোমিটার গতিতে বল করার কৃতিত্ব অর্জন করেছেন—এটি বেশ উজ্জ্বল মুহূর্ত। মিরাজ ৪ নম্বরে ব্যাটিং করেছেন। ২৮, ২২, এবং ৬৬ রানের ইনিংসে তিনি সাকিব আল হাসানের স্থানে নিজেকে শক্তিশালী অবস্থানে রাখতে পারবেন, এটা নিশ্চিত। তবে আফগানিস্তান বিপক্ষে সিরিজের ফলাফলে এত ইতিবাচক দিকের কোনও স্থান নেই।

### উপসংহার

যতই ইতিবাচক বিষয় খোঁজা হোক, এই সিরিজে বাংলাদেশ আসলে নিজেদের ভুলেই হারলো। ব্যাটিংয়ের ধারাবাহিকতা, মিডল অর্ডারে দায়িত্ব নিতে না পারা, ওপেনারদের বড় ইনিংস না পাওয়া এবং ফিল্ডিংয়ের দুর্বলতা—এসব কারণে আফগানিস্তানের বিপক্ষে সিরিজটি হেরে গেছে বাংলাদেশ। এই পরাজয় থেকে শিক্ষা নিয়ে ভবিষ্যতে নিজেদের ভুল শুধরানোর প্রয়োজন।

সর্বশেষ সংবাদ