ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয়বার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ারবাজারে উত্তেজনা বেড়েছে। মার্কিন ডলার ও বিটকয়েনের মূল্যও ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। বুধবার, গত আট বছরের মধ্যে একদিনে মার্কিন ডলারের সর্বোচ্চ মূল্যবৃদ্ধি ঘটেছে এবং বিটকয়েনের দাম ইতিহাসের সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছেছে।
বাজার বিশেষজ্ঞরা ধারণা করছেন, ট্রাম্প যদি দ্বিতীয় মেয়াদে কর কমানোর সিদ্ধান্ত নেন এবং আমদানি শুল্ক বাড়ান, তাহলে মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধি পেতে পারে, যার ফলে নীতি সুদের হার কমানোর গতি ধীর হয়ে যেতে পারে। সুদের হার বেশি থাকলে বিনিয়োগকারীরা ডলারভিত্তিক সঞ্চয় ও বিনিয়োগ থেকে ভাল মুনাফা পাবেন।
এদিকে, নির্বাচনের ফল প্রকাশের পর বিশ্বব্যাপী শেয়ার ও মুদ্রাবাজারে তীব্র সাড়া দেখা গেছে। একনজরে বিশ্ববাজারের গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনগুলো:
১. যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ার সূচকগুলো ঊর্ধ্বমুখী, বিশেষ করে ব্যাংক শেয়ারগুলো ভালো করেছে।
২. পাউন্ড, ইয়েনসহ অন্যান্য বড় মুদ্রার বিপরীতে ডলারের মূল্য বেড়েছে ১ দশমিক ৬৫ শতাংশ। বিশেষ করে পাউন্ডের দাম ডলারের বিপরীতে ১ দশমিক ১৬ শতাংশ কমেছে, যা গত ৮ মাসে সর্বোচ্চ পতন। ৩. যুক্তরাজ্যের বড় কোম্পানির শেয়ার সূচক, FTSE 100 শুরুতে বেড়েছিল, তবে শেষপর্যন্ত কিছুটা কমে যায়।
৪. ইউরোর বিপরীতে ডলারের দাম কমেছে ১ দশমিক ৮৯ শতাংশ, যা গত জুনের পর সর্বনিম্ন। ৫. জাপানের নিক্কি 225 সূচক ২ দশমিক ৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে, যা জাপানি অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক।
৬. তবে, চীনের সাংহাই কম্পোজিট ইনডেক্স কিছুটা কমেছে, এবং হংকংয়ের হ্যাং সেং সূচক ২ দশমিক ২৩ শতাংশ নেমে গেছে।
বিশ্ববাজারের মধ্যে বিটকয়েনের দামও উল্লিখিত সময়কালে রেকর্ড করেছে। ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রকে ‘বিশ্বের বিটকয়েন ও ক্রিপ্টোকারেন্সির পরাশক্তি’ বানানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এর ফলস্বরূপ, বিটকয়েনের দাম ৭৫,৯৯৯ ডলারে পৌঁছেছে, যা ৬,৬০০ ডলার বৃদ্ধি পেয়েছে।
এই পরিবর্তনের পেছনে ট্রাম্পের বিপরীত দৃষ্টিভঙ্গি ভূমিকা রাখছে, কারণ বাইডেন প্রশাসন ক্রিপ্টোকারেন্সির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে, তবে ট্রাম্প তার বিপরীতে উদার মনোভাব পোষণ করছেন। ট্রাম্পের নীতি ও ইলন মাস্কের সমর্থন এই মুদ্রার মূল্যের ওপর প্রভাব ফেলেছে, যেহেতু মাস্ক বিটকয়েনের প্রতি ইতিবাচক মনোভাব রাখেন এবং তার প্রতিষ্ঠান টেসলা বিটকয়েনের বাজারে বিনিয়োগ করেছে।
এদিকে, গতকাল টেসলার শেয়ারের মূল্য ১৪ শতাংশ বেড়ে দুই বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ অবস্থানে পৌঁছেছে। নির্বাচনী প্রচারণায় ইলন মাস্ক ট্রাম্পকে সমর্থন জানিয়ে তার ক্রিপ্টোকারেন্সি নীতির প্রতি আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন, যা বিটকয়েনের দাম বৃদ্ধির পেছনে আরও একটি কারণ।
বিশ্বের বিভিন্ন আর্থিক বাজারে অস্থিরতা সৃষ্টি হতে পারে, বিশেষত ট্রাম্পের অর্থনৈতিক পরিকল্পনা এবং অন্যান্য অনিশ্চয়তার কারণে। মার্কিন বন্ডের সুদহার বেড়েছে এবং বিনিয়োগকারীরা মনে করছেন, নতুন প্রশাসন আরও ঋণ নিবে, যার ফলে বাজারে ঝুঁকির প্রিমিয়াম বৃদ্ধি পাবে।
ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে ২০১৬ সালে বাণিজ্যযুদ্ধ শুরু হয়েছিল, যা প্রধানত চীনের বিরুদ্ধে ছিল। এবার তিনি ঘোষণা করেছেন যে, নির্বাচিত হলে তার বাণিজ্যযুদ্ধের পরিসর বাড়ানো হবে, যাতে শুধু চীন নয়, বিশ্বের অন্যান্য দেশও এর শিকার হবে। বিশেষ করে, যুক্তরাজ্যসহ ধনী দেশগুলোর ওপর এই নীতির প্রভাব পড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ট্রাম্পের পরিকল্পনা অনুযায়ী, তিনি আমদানি করা পণ্যের ওপর ১০ থেকে ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করতে পারেন এবং চীন থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর শুল্ক ৬০ শতাংশ বা তারও বেশি হতে পারে।
পররাষ্ট্রনীতিতে তিনি বিচ্ছিন্নতাবাদী অবস্থান নেবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে, যার ফলে বাইডেন প্রশাসনের মতো তিনি তাইওয়ানকে সমর্থন করবেন না, যা চীন-মার্কিন সম্পর্ককে আরও জটিল করে তুলতে পারে।
এদিকে, আগামী বৃহস্পতিবার মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভ সুদহার নিয়ে তার সর্বশেষ সিদ্ধান্ত ঘোষণা করবে, যা বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক পরিস্থিতির ওপর গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে। ফেডের চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েল কী সিদ্ধান্ত নেন, সেদিকে সারা বিশ্বের দৃষ্টি নিবদ্ধ থাকবে।
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের নীতি সুদের হার বাড়ালে, ট্রেজারি বন্ডের সুদ বেড়ে যাবে, এবং বিনিয়োগকারীরা উন্নয়নশীল দেশগুলোর দিকে আগ্রহী হবেন না। এমন পরিস্থিতিতে ডলারের দাম বৃদ্ধি পাবে, এবং বিভিন্ন দেশের মুদ্রার মান কমে যাবে।