ইউক্রেনের জাপোরিঝঝিয়া শহরে দোকানের বাইরে ভাঙা কাচের টুকরো পরিষ্কার করছিলেন ইননা। তার চোখে উদ্বেগের ছাপ, কারণ তিনি জানেন, তাঁর দেশের ভবিষ্যৎ এই মুহূর্তে যুক্তরাষ্ট্রের ভোটারদের হাতে। তিনি বলছিলেন, "আমাদের আশা, কমলা হ্যারিস (৫ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া মার্কিন নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী) জয়ী হবেন এবং ইউক্রেনের প্রতি সমর্থন অব্যাহত রাখবেন।"
ইননার দোকানটি রাশিয়ার বোমা হামলায় ধ্বংস হয়েছে। তার মতোই শহরের অনেকের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। যদিও ইউক্রেনীয় সেনারা ২০২৩ সালে জাপোরিঝঝিয়ায় রুশ বাহিনীর বিরুদ্ধে পাল্টা আক্রমণ চালিয়েছিলেন, তাতে খুব একটা সফলতা আসেনি। এমন পরিস্থিতিতে, ইউক্রেনের জন্য অব্যাহত মার্কিন সহায়তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ইননা সহ ইউক্রেনের সাধারণ মানুষ, সামরিক বাহিনী এবং সরকারী কর্মকর্তারা জানেন, যে কোনো বড় রাজনৈতিক পরিবর্তন ইউক্রেনের যুদ্ধ পরিস্থিতিকে সরাসরি প্রভাবিত করবে। বিশেষত, ২০২৪ সালের মার্কিন নির্বাচনে উভয় প্রার্থী—ডেমোক্র্যাট কমলা হ্যারিস এবং রিপাবলিকান ট্রাম্প—ইউক্রেনের ভবিষ্যতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
কমলা হ্যারিস যদি নির্বাচনে জয়ী হন, তবে তিনি ইউক্রেনকে আরও সামরিক সহায়তা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। কিন্তু, রিপাবলিকান নিয়ন্ত্রিত কংগ্রেসে তার ক্ষমতা সীমাবদ্ধ হতে পারে। অন্যদিকে, ট্রাম্প যদি জয়ী হন, তাহলে তার প্রশাসন ইউক্রেনকে সহায়তা প্রদান কমিয়ে দিতে পারে, যা বর্তমান সময়ে ৫০ বিলিয়ন (৫ হাজার কোটি) ডলারের বেশি।
ইউক্রেনের সামনে দুটি প্রধান সম্ভাবনা রয়েছে: প্রথমত, ইউক্রেনকে কিছু ভূখণ্ড রাশিয়ার কাছে ছেড়ে দিতে হতে পারে, যেমনটি ট্রাম্পের বক্তব্যে ইঙ্গিত পাওয়া যায়। দ্বিতীয়ত, যুক্তরাষ্ট্র সম্পূর্ণভাবে ইউক্রেনকে সহায়তা বন্ধ করে দিতে পারে, যার ফলে রাশিয়া আরও বেশি ইউক্রেনীয় এলাকা দখল করতে সক্ষম হবে।
অন্যদিকে, ইউক্রেনের দক্ষিণ ও পূর্বাঞ্চলীয় অঞ্চলে ট্রাম্পের প্রতি সমর্থন বাড়ছে। তারা যুদ্ধের অবসান চায় এবং মনে করছে, ট্রাম্পের নেতৃত্বে এই যুদ্ধ দ্রুত সমাপ্ত হতে পারে। কিন্তু, ইউক্রেনের সেনারা জানেন যে, রাশিয়ার বিরুদ্ধে তাদের একক লড়াই চালিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। আন্দ্রিয়া নামে এক ইউক্রেনীয় সেনা বলছিলেন, "যদি যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা কমে বা বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে আমাদের যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া খুবই কঠিন হয়ে পড়বে।"
অতএব, ৫ নভেম্বরের মার্কিন নির্বাচনের ফলাফল ইউক্রেনের ভবিষ্যতের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইউক্রেনের জনগণ, সেনাবাহিনী এবং রাজনৈতিক নেতারা সকলেই জানেন যে, যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন ছাড়া তাদের রাশিয়ার বিরুদ্ধে সফল হওয়া কঠিন।