আজ মঙ্গলবার, যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকেরা যখন ভোট দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন, নির্বাচনী কর্মকর্তারা তাদের ধৈর্য ধরে ফলাফলের জন্য অপেক্ষা করতে বলেছেন। দেশটির ইতিহাসে এবারের নির্বাচন সবচেয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হতে যাচ্ছে, এবং ফলাফল জানতে কয়েক দিন পর্যন্ত সময় লাগতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন কর্মকর্তারা।
যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন ব্যবস্থায় নাগরিকরা সরাসরি প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করেন না। নাগরিকদের ভোট ৫৩৮টি নির্বাচক ভোটে বিভক্ত হয়ে যায়, যা নির্ধারণ করে প্রেসিডেন্ট কে হবেন। যে প্রার্থী জনসাধারণের ভোটে জয়ী হন, সেই প্রার্থী তার রাজ্যের ইলেকটোরাল কলেজের ভোট পেয়ে থাকেন। বড় রাজ্যগুলোর ইলেকটোরাল কলেজে বেশি ভোট থাকে, যেহেতু সেখানে কংগ্রেসের প্রতিনিধির সংখ্যা বেশি।
এবারের নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রেসিডেন্ট প্রার্থী কমলা হ্যারিস এবং রিপাবলিকান পার্টির ডোনাল্ড ট্রাম্প। এই দুই প্রার্থীর মধ্যে অন্তত ২৭০টি ইলেকটোরাল ভোট পেতে কঠিন লড়াই হবে, যা প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার জন্য প্রয়োজন। তবে বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, এই নির্বাচনে ভোট গণনার ফলাফল জানাতে দেরি হতে পারে এবং ভোট গণনা নিয়ে আইনি জটিলতা তৈরি হতে পারে।
এবারের নির্বাচনে, ৮ কোটি ১০ লাখেরও বেশি ভোটার আগাম ভোট দিয়েছেন। প্রথম ভোট গ্রহণ শেষ হবে ‘ইস্টার্ন টাইম’ সন্ধ্যা ছয়টায়, তবে ফলাফল জানাতে কয়েক দিন সময় লাগতে পারে, যদি ভোটের মধ্যে কোনো সমতা দেখা দেয়।
২০১৬ ও ২০১২ সালের নির্বাচনে ভোটের ফল দ্রুত ঘোষণা করা হলেও, ২০২০ সালের নির্বাচনে মার্কিন সংবাদমাধ্যমগুলো ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী জো বাইডেনকে ৭ নভেম্বর (শনিবার) জয়ী ঘোষণা করেছিল, যদিও নির্বাচন শেষ হয়েছিল তার আগের মঙ্গলবার।
ভোট গণনা এবং প্রক্রিয়া একেক অঙ্গরাজ্যে ভিন্ন হতে পারে। অনেক রাজ্যে ডাকযোগে বা বিদেশ থেকে ভোটের গণনা প্রক্রিয়া নিয়ে আইন পরিবর্তন হয়েছে, তবে পেনসিলভানিয়া এবং উইসকনসিনে এসব পরিবর্তন হয়নি। এ দুটি রাজ্য নির্বাচন ফলাফলে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ওই রাজ্যগুলিতে ৫ নভেম্বরের আগে ভোট গণনা শুরু করার নিয়ম নেই, যার ফলে ফলাফল জানাতে দেরি হতে পারে।
এছাড়া, কোনো রাজ্যে ভোট সমান হলে পুনর্গণনা হতে পারে। নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার আগে স্থানীয় নির্বাচনী কর্তৃপক্ষ এর সত্যায়ন করবে, তবে মার্কিন সংবাদমাধ্যমরা তাদের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী সম্ভাব্য ফলাফল আগে থেকেই প্রকাশ করে দেয়। যদিও এটি আনুষ্ঠানিক নয়, এবং অঙ্গরাজ্য পর্যায়ে নির্বাচনী ফলাফল ১১ ডিসেম্বরের মধ্যে সত্যায়ন করতে হয়। ২৫ ডিসেম্বরের মধ্যে সিনেট সভাপতিকে (বর্তমানে ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস) প্রতিটি রাজ্যের ইলেকটোরাল ভোটের সনদ গ্রহণ করতে হবে। এর পর ৬ জানুয়ারি কংগ্রেস ভোট গণনা করবে এবং ফলাফল নিশ্চিত করবে। নতুন প্রেসিডেন্টের অভিষেক হবে ২০ জানুয়ারি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নির্বাচনী ফলাফল ঘোষণায় দেরি হতে পারে। ২০২২ সালের মধ্যবর্তী নির্বাচনে অন্তত ২২ কাউন্টির নির্বাচনী কর্মকর্তারা ফলাফল সত্যায়ন করতে দেরির পক্ষে ছিলেন, যা ২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের তুলনায় প্রায় ৩০ শতাংশ বেশি। কিছু নির্বাচনী কর্মকর্তারা আবার ফলাফল সত্যায়নে বাধা সৃষ্টি করতে পারেন এবং সম্ভাব্যভাবে পুনরায় নির্বাচন দাবি করতে পারেন, যা নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণায় আরও দেরি হতে পারে।